হাসপাতালটির অব্যবস্থাপনার শেষ কোথায়
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এক সময় যার সুনাম ছিল এ অঞ্চলের ভরসা হিসাবে; আজ তা পরিণত হয়েছে এক ভয়ংকর ‘ঘুস ও চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট’র অভয়ারণ্যে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, হাসপাতালের প্রাণকেন্দ্র নার্সিং বিভাগকে জিম্মি করে রেখেছে দুই সিনিয়র স্টাফ নার্সের নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী চক্র। এদের কর্মকাণ্ডে শুধু সাধারণ নার্সরাই নন, নিুবিত্ত ও গরিব রোগীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, হাসপাতালটিতে নার্সদের ডিউটি রোস্টার থেকে শুরু করে বিশেষায়িত ট্রেনিং, এমনকি আইসিইউর মতো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের সিট-সবকিছুই এ সিন্ডিকেটের ঘুস বাণিজ্যের শিকার। টাকা না দিলে সাধারণ নার্সদের ভাগ্যে জোটে না ন্যায্য ডিউটি বা ট্রেনিংয়ের সুযোগ, উলটো নেমে আসে লাঞ্ছনা ও মানসিক হেনস্তা। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, আইসিইউ ইনচার্জের পদে এক আত্মীয়কে বসিয়ে এ চক্র রোগীদের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে। টাকা দিলে দীর্ঘ সিরিয়াল ডিঙিয়ে সিট মেলে, আর টাকা না দিলে গরিব রোগীরা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে থাকে। ডোপ টেস্টের মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রেও অর্থ দিয়ে ফলাফল পালটে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ করে-এ সিন্ডিকেট কতটা গভীরে শিকড় গেড়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়টি আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ সিন্ডিকেট শুধু প্রশাসনিক কাঠামোকে পঙ্গু করেনি, তারা নৈতিকতার কবর রচনা করেছে। আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহারের যে নজির স্থাপন করা হয়েছে, তা দল ও সরকারের ভাবমূর্তির ওপর যে কালিমা লেপন করছে, তা বলাই বাহুল্য। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তরফে ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ ধরনের দায়সারা আশ্বাস যথেষ্ট নয় বলে মনে করি আমরা। যখন সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্লজ্জভাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে উলটো অন্যদের দিকে আঙুল তুলছেন, তখন প্রয়োজন দ্রুত ও দৃশ্যমান কঠোর পদক্ষেপ। শুধু বদলি বা বিভাগীয় তদন্ত নয়, এ সিন্ডিকেটের সব সদস্যকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে ফৌজদারি মামলাও করা উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু চিকিৎসাকেন্দ্র নয়, এটি সিলেটের স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ স্থান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে একটি নিরপেক্ষ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে; যারা শুধু তদন্ত নয়, বরং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে হাসপাতালটিকে সিন্ডিকেটমুক্ত করবে। রোগীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।