ইসরায়েলি তাণ্ডবে বিধ্বস্ত গাজা শহর। ছবি: সংগৃহীত
‘বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, গাজার যুদ্ধ এখনই শেষ করতে হবে’ উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৬টি দেশ। বিবৃতিতে দেশগুলো গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা নিচে তালিকাভুক্ত স্বাক্ষরকারীরা একটি সহজ, জরুরি বার্তা নিয়ে একত্রিত হয়েছি। গাজার যুদ্ধ এখনই শেষ করতে হবে। গাজার বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে।’
এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সরকারের সাহায্য বিতরণ মডেল বিপজ্জনক। এটি অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং গাজাবাসীদের মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে। আমরা ‘ফোঁটা ফোঁটা সাহায্য খাওয়ানো’ এবং শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের অমানবিক হত্যার নিন্দা জানাই – যারা তাদের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পানি ও খাবার খুঁজছিল। এটা ভয়াবহ যে, ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেসামরিক জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানে ইসরায়েলি সরকারের অস্বীকৃতি অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলকে তার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে হামাস কর্তৃক নিষ্ঠুরভাবে বন্দী থাকা জিম্মিরা ভয়াবহভাবে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা তাদের অব্যাহত আটকের নিন্দা জানাই এবং তাদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানাই।
‘
একটি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পরিবারের যন্ত্রণার অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম আশা প্রদান করে। আমরা ইসরায়েলি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে সাহায্য প্রবাহের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং জাতিসংঘ ও মানবিক এনজিওগুলোকে তাদের জীবন রক্ষাকারী কাজ নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে করতে সক্ষম করে। আমরা সকল পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার আহ্বান জানাই।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ‘মানবিক শহরে’ স্থানান্তরের প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। স্থায়ীভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আঞ্চলিক বা জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের দিকে যে কোনো পদক্ষেপের আমরা তীব্র বিরোধিতা করি।
বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েলের বেসামরিক প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত ‘E1’ বসতি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, এটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে দুই ভাগে বিভক্ত করবে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ইতোমধ্যে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরজুড়ে বসতি স্থাপনের কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আর রক্তপাতের কোনো লাভ নেই। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশরের প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক পথ তৈরির জন্য আমরা আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’
এই বিবৃতিতে সই করেছে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এছাড়াও ইইউ কমিশনার ফর ইকুয়ালিটি, প্রিপ্রেডেনসি অ্যান্ড ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এতে সই করেছে।