রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় চলছে আবাসিক হোটেলে অবৈধ দেহব্যবসা এবং এঘটনা জানেন না কে? এপ্রশ্নের উত্তরে এলাকার রথীমহারথীদের মধ্যে এমন ব্যক্তির নাম মেলা ভার যার কাছে এসব বিষয়ের কমবেশী খবর নাই!তথ্য মিলেছে, যাত্রাবাড়ী থানার অন্তর্গত কুতুবখালীর তৎকালীন হোটেল গোল্ডেন থেকে হোটেল পপুলার বা তার আশেপাশে থাকা প্রায় গোটা বিশেক আবাসিক হোটেলের প্রায় প্রতিটিই একেকটি তৈরির অপরাধ আখড়া।
যাত্রাবাড়ী ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে কাঁচাবাজারে ভিতরে রয়েছে পাইকারি বাজার, আর তারই উপরে চারতলা ভবনের টপ ফ্লোরে রীতিমতো সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে চলছে হোটেল পপুলার (আবাসিক)-এ সবধরনের অবৈধ কাজ। তথ্য মতে, এসব প্রতিষ্ঠানে হোটেলের নামে আসলে চলে দেহ ব্যবসা ও নিরাপদে ইয়াবা সেবন।যাত্রাবাড়ী মোড়ের হোটেল পপুলারের মালিক জামালের রহস্য উন্মোচন করতে গেলে অনুসন্ধানী তথ্যকর্মীদের কাছে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হচ্ছে, বাজারের অভ্যন্তরে যে বিল্ডিংয়ে রয়েছে হরেক রকমের দোকানপাট, মিনি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, ওদিকে রাস্তাঘাট বলতে যার কিছুই নাই এমন একটি জায়গায় জামাল কি করে একটা আবাসিক হোটেল চালায়? পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কি করে মেলে? এমন একটি জায়গায় আবাসিক হোটেলের বৈধতা কেনো সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ বলে গণ্য হবে না, এটাই এলাকাবাসী ও বাজারের বিভিন্ন দোকানীদের প্রশ্ন।যাত্রাবাড়ী মোড়ে জামালের এই আজব ‘হোটেল পপুলার’-এর তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে সেখানে আরও একটি আবাসিক হোটেলের খোঁজ মিলে যা শ্যামপুর থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। অনুসন্ধানে মেলে সেখানে দেহব্যবসার পাশাপাশি রুম ভাড়া নিয়ে চলে ইয়াবা সেবন। নিরাপত্তার সাথে ইয়াবা সেবনের জন্য এইসব হোটেলের কোনো জুড়ি নাই, -এমনটাই প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে হোটেল পপুলারের মালিক জামালের অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন রকমের কায়দাকানুন!
সরেজমিনে দেখা যায় জামালের রয়েছে বিশাল এক রেজিঃ খাতা, যেখানে জামালের হোটেলের ম্যানেজারকে রীতিমতো তারিখ ও নামধামসহ লিখে রাখতে হয় কোন কোন নেতা , গুন্ডাপান্ডা, প্রশাসন ও সাংবাদিককে কত কি পেমেন্ট দেয়া হয়েছে!কুতুবখালি এলাকা থেকে সায়দাবাদ জনপথ মোড় পর্যন্ত অন্তত ১০টিরও অধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেসব হোটেলগুলোতে চলছে অবাধে নারীদের দিয়ে অবৈধ দেহ ব্যবসা। হোটেল রয়েল, হোটেল ছায়ানীড়, হোটেল আনোয়ারা, হোটেল রংধনুসহ যাত্রাবাড়ী মোড়ের আশেপাশে প্রায় প্রতিটি হোটেলেই চলে অসামাজিক কার্যকলাপ কিন্তু দেখার যেনো কেউ নেই। জানা গেছে থানা পুলিশ রীতিমতো হপ্তা পায় তাই তারা ওদিকে নজর দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।যাত্রাবাড়ী এলাকায় আবাসিক হোটেলের নামে দেহ ব্যবসা বিষয়ক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে গেলে তথ্যকর্মীদের কথা হয় এমনই এক হোটেল মালিক সোহেল এর সঙ্গে। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার মুঠোফোন ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই বোঝাতে চান! একপর্যায়ে চাঁদাবাজির কথা টেনে এনে একপর্যায়ে সংবাদকর্মীদের আইসিটির মামলা দেবার কথা বলেও হোয়াটস আপ মেসেঞ্জারে হুমকি দিতে কার্পণ্য করেন না সোহেল। অথচ এসব এলাকার সবাই জানেন যে আবাসিক হোটেলের নামে এসব প্রতিষ্ঠানে আসলে কি চলে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এলাকাবাসী বলেন, “এসব কথা সবাই জানে, শুধু যেনো জানে না পুলিশ প্রশাসন! নয়তো থানার সামনে এবস অসামাজিক কার্যকলাপ কি করে চলে?” একাধিক লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এসব হোটেলগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে এলাকার সামাজিক পরিবেশ। এছাড়াও এইসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের হোতা হোটেল মালিকরা এতোই দাপুটে যে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে মিথ্যে মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার একাধিক সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও।
এবিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মফিজুল আলম জানান, বিষয়টি তদন্তবাদ অবশ্যই যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে অনুসন্ধানী তথ্যকর্মীরা হোটেল মালিক সোহেলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বেরিয়ে আসে সোহেলের অদ্যোপান্ত। জানা যায় তার সিন্ডিকেটে অন্যান্য আরো সদস্যের কথা। জানা যায় সোনারগাঁও এলাকার একাধিক পুরনো দেহব্যবসার দালালদের চাঞ্চল্যকর তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী জানায়, “সোহেল তার লোকজন দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে তার হোটেলের হাজার হাজার ভিজিটিং কার্ড ছড়িয়ে দিয়ে থাকেন খদ্দের পেতে। শনির আখড়া ব্রিজ, চিটাগাং রোড ব্রিজ, সাইনবোর্ডে ফ্লাইওভারে এসব কার্ড হাতে পেয়ে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা নিরাপদে যৌনকর্ম সম্পাদন করতে এসব আবাসিক হোটেলে রীতিমতো যাতায়াত করে।” অপরদিকে একথার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আশেপাশের একাধিক দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা। এছাড়াও নিশ্চিত নিরাপত্তার মধ্যে অবৈধ কাজ করতে গিয়ে এসব হোটেলগুলোতে খুনের মতো ভয়ংকর ঘটনাও ঘটে থাকে। সদ্য হোটেল রাশনূর স্কয়ার নামক একটি হোটেলে এমনই মারাত্বক এক খুনের ঘটনা ঘটে।
আবাসিক হোটেল ব্যবসার নামে এহেনো অসামাজিক কার্যকলাপে জর্জরিত একাধিক এলাকাবাসী নিজের মানসম্মান আর ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের খাতিরে এসব তথাকথিত আবাসিক হোটেলের বিষয়টি তলিয়ে দেখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা বলেন, “সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করবো এটা আমাদের নাগরিক অধিকার। আর আমরা যদি তা না পারি তবে কি লাভ আমাদের কষ্টের পয়সা দিয়ে পুলিশ প্রশাসন রেখে!? আমরা এর অবসান দেখতে চাই।”
উল্লেখ্য :
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম বিসিআরএফ এর একটি অনুসন্ধানী টিম দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে এ রিপোর্ট প্রতিবেদনকারে প্রকাশ করেছে।