1. admin@orieldigital.pw : rahad :
  2. Jhrepons@gmail.com : halchal :
ঢাকায় মানব বসতির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের! | Daily Halchal Somoy
শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
দামি ঘড়ি-আইপ্যাড দেখে লোভ হয়েছিল ‘প্রলোভন’ জয়ের গল্প লিখলেন জ্বালানি উপদেষ্টা যাত্রাবাড়ী রাজনৈতিক হালচাল-সাফকথা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ নির্বাচন বৈধ না হলে তা আয়োজনের কোনো অর্থ নেই: ড. ইউনূস নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কিনা, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থাকে স্পষ্ট করলেন ড. ইউনূস শেখ মুজিবের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক জানিয়ে শোবিজ তারকাদের পোস্ট শিল্প খাতে মন্দা কাটছে না গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘অপরাধে ঝুঁকছেন’ বেকার শ্রমিকেরা ভারতে ৩ মাসে ২০০ মানুষের ধ’র্ষ’ণের শিকার বাংলাদেশি কিশোরি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

ঢাকায় মানব বসতির ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের!

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৮৯ Time View

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মিলেছে প্রাচীন মানব বসতির আলামত

বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানব বসতির ইতিহাস। এতদিনের জানা ইতিহাসের বাইরে সুপ্রাচীন ঢাকার সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদের প্রমাণ মিলছে, যা ৪০০ বছরের ঢাকার ইতিহাসকে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বদলে ফেলতে পারে! যার সঙ্গে সুপ্রাচীন কালের পুণ্ড্রনগর বা মহাস্থানগড় ও উয়ারী-বটেশ্বরের ইতিহাসের সদৃশ রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা বলছেন, প্রাচীন দুর্গের সন্ধানে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিচালিত এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আদি-ঐতিহাসিক যুগের গ্লেজড ও রোলেটেড মৃৎপাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা ঢাকাকে ভূ-মধ্যসাগর ও পারস্য বা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বা যোগাযোগের সম্পর্ককে নির্দেশ করে। এ বাণিজ্যপথ বা সিল্ক রুটের সঙ্গে যুক্ত ছিল আদি-ঐতিহাসিক যুগে উয়ারী-বটেশ্বর ও পুণ্ড্রবর্ধন বা মহাস্থানগড়ও।

গবেষকরা আরো বলছেন, প্রচলিত ধারণা ও তথ্যের ভিত্তিতে আজ অবধি ঢাকার ৪০০ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাসই শুধু পাঠ করে এসেছি। বিগত ১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান ঢাকাকে সুবে বাংলার রাজধানীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। প্রচলিত তথ্যমতে, ১৬১০ সাল থেকে আজ অবধি ঢাকা পাঁচ বার লাভ করেছে রাজধানীর মর্যাদা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণার এক তথ্য বলছে, সমৃদ্ধ শহর হিসেবে ঢাকা সাত বার লাভ করেছিল রাজধানীর মর্যাদা, যা বিশ্বের ইতিহাসে একেবারেই বিরল ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঢাকার আদি ইতিহাসের সন্ধানে প্রথম বারের মতো ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। খননে ঢাকার ইতিহাসের বাঁক ফেরানোর নিদর্শন পাওয়া যায়। কারা হাসপাতালের সামনে ও প্রধান কারা ফটকের কাছাকাছি কিছু জায়গার ভূ-উপরিভাগে জরিপের মাধ্যমে প্রাচীন ইট ও মৃৎপাত্রের টুকরার ‍উপস্থিতি দেখে তিনটি স্থানের ১১টি স্পটে পরীক্ষামূলক উত্খনন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও খননকাজের তত্ত্বাবধায়ক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় প্রায় সব উত্খনন খাদে প্রাচীন মানব বসতির আলামত পাওয়া গেছে, যা পরে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে নির্দেশনা দেয় ঢাকার ইতিহাস শুধু কয়েক শ বছরের নয়, প্রায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার বছরের। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দূরত্ব অনুযায়ী প্রত্নস্থানসমূহের অবস্থান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আদর্শ ভূমিরূপে প্রাচীনকাল থেকেই ঢাকায় গড়ে উঠেছিল এক সমৃদ্ধ মানব বসতি ও সভ্যতা।

এ প্রত্নতত্ত্ববিদ জানান, তার নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রত্নতত্ত্ব গবেষক ও শিক্ষার্থী ২০১৭-১৮ সালে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ করেন। তারা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনের অংশ, রজনীগন্ধা ভবনের আঙিনা, কারা হাসপাতালের সামনের অংশ, ১০ সেল ও যমুনা ভবনের পশ্চিম এলাকা—এই পাঁচ স্থানে ১১টি খননকাজ করেন। এতে তারা একটি প্রাচীন দুর্গের দেওয়াল, কক্ষ, নর্দমা, কূপের সন্ধান পান। এছাড়া এখানে কড়ি, মোগল আমলের ধাতব মুদ্রা, বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির ভাস্কর্যসহ অনেক রকম প্রত্ননিদর্শন পেয়েছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয়েছে, ইসলাম খানের আগমনের অনেক আগেই ঢাকায় একটি প্রাসাদ দুর্গ ছিল। সুবেদার ইসলাম খানের সেনাপতি ও লেখক মির্জা নাথান তার ‘বাহারীস্তান-ই-গায়েবী’ বইতে ঢাকায় যে দুর্গের কথাটি উল্লেখ করেছিলেন, সেটিকে পরে ইতিহাসবিদরা ‘ঢাকাদুর্গ’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। এই দুর্গে ইসলাম খান বসবাস করেছেন। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে পাওয়া নিদর্শন যুক্তরাষ্ট্রের বেটা ল্যাবরেটরিতে কার্বন-১৪ পরীক্ষার পর প্রমাণ পাওয়া গেছে, এগুলো ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দের। ফলে এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে, এই দুর্গ ইসলাম খানের আসার আগেই নির্মিত হয়েছিল এবং এটিকে ‘ঢাকাদুর্গ’ নয়; বরং ‘ঢাকার দুর্গ’ বলা সংগত।

এই প্রত্নতত্ত্ববিদ আরো বলেন, এটা আমাদের পরীক্ষামূলক খননকার্য। এ খননকার্যে আমরা অংশবিশেষ পেয়েছি। এর মধ্য দিয়ে এ এলাকা জুড়ে ইতিহাসের বাঁক ফেরানোর আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই খননকার্য আমাদের আর করতে দেওয়া হয়নি। এর বিরুদ্ধে প্রফেসর মুনতাসীর মামুন নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলেন। নানাভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাধা দিয়েছিলেন। যেহেতু আমরা বড় একটি আবিষ্কার করেছি। তিনি আবার ঢাকা বিশেষজ্ঞ। বাস্তবায়ন কমিটিতে ছিলেন। তার নেতৃত্ব ছিল। তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পর্কে প্রচার পর্যন্ত করতে দেননি। তিনি নানাভাবে বাধা দিয়েছেন। কি যেন গোপন তথ্য তার কাছে আছে। সেজন্য এটা করা যাবে না—এমনটাই বারবার বলেছিলেন। অথচ এসব খননকার্য কোনো পণ্ডিত ইতিহাসবিদের জন্য নয়, দেশবাসীর জন্য। দেশের মানুষ গবেষণাপত্র পড়বে না। পড়বে গণমাধ্যমের সংবাদ। এ ব্যাপারে জানতে প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, এই খনন প্রকল্পের নাম হচ্ছে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ এবং পারিপার্শ্বিক এলাকার উন্নয়ন। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল তৌহিদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হচ্ছে এর উদ্যোগী মন্ত্রণালয়। তাদের মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পরামর্শক হিসেবে ড. সুফি মোস্তাফিজকে খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে তিনি কয়েকটা খননকাজ করেছেন। রিপোর্ট প্রদানের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে আমাদের অফিশিয়াল পর্বটা সমাপ্ত হয়েছে। তিনি কিছু সুপারিশও করেছিলেন। সে সুপারিশের ভিত্তিতে কারা অধিদপ্তর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সেই সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর অফিশিয়ালি সুফি মোস্তাফিজ স্যার সাজেস্টেড কয়েকটি জায়গায় পর্যায়ক্রমে খনন করছে। স্যারের গাইডলাইন অনুযায়ীই কাজ করা হচ্ছে। যেহেতু সরকারি জমি এবং প্রকল্প, তাই সরকারি সংস্থার মাধ্যমে খনন করা হচ্ছে। তবে মাটির নিচে লেয়ারে লেয়ারে যেমন মাটি জমে সে রকম ইতিহাসও। তাই প্রতিটি ইতিহাসকে সম্মানের সঙ্গে দেখে প্রত্যেকটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে, কারণ ঢাকার আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস তো ধ্বংস করতে পারি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেন, খননে প্রাপ্ত কয়েকটি গ্লেজড মৃৎপাত্র বা রোলেটেড মৃৎপাত্রের মিল থাকলেই পুণ্ড্রবর্ধনের আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। তবে বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized BY WooHostBD