দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন আজ বুধবার (৫ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে। বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠকের আগে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে চলতি অধিবেশন কতদিন চলবে তা নির্ধারণ করা হবে। আগামী রোববার (৯ জুলাই) চলতি অধিবেশন শেষ হবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সাধারণত বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হয়। আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। এরআগে ১০ জুন সম্পূরক বাজেট পাস হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
সাধারণত চলতি সংসদের কোনও সদস্য মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যুর পর অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করে রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করা হয়। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে ‘খুন’ হন। তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না হওয়ায় বুধবার বৈঠকে তার জন্য শোক প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সংসদের দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নোত্তর রয়েছে। এ ছাড়া আরও চারটি মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর হবে।
চন্দ্রবাবু ও নীতিশকে নিয়ে রহস্য
এই পটভূমিতে ভারতের নির্বাচনি চালচিত্রে সহসা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছেন জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমার ও টিডিপির নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু। ঘটনাচক্রে তাদের দুজনেরই ঘন ঘন রাজনৈতিক সঙ্গী বদল করার খুব পুরনো ইতিহাস আছে।
সবশেষ ফলাফল অনুযায়ী জেডিইউ ১২টি আসনে ও টিডিপি ১৬টির মতো আসনে হয় জিতেছে বা এগিয়ে আছে।
ফলে এই দুই দলের ২৮ জন এমপি-র সমর্থন পেলে বিজেপি জোটের গরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা থাকে না।
এরা ছাড়াও অবশ্য বিজেপির সঙ্গে আরও কয়েকটি ছোট ছোট শরিক দল আছে– তবে তারা কেউই চারটি বা ছ’টির বেশি আসন পায়নি।
ভারতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চন্দ্রবাবু ও নীতিশ দুজনেই হয়তো রাজনৈতিক দরকষাকষি করার চেষ্টা চালাবেন।
বিজেপিকে বা উল্টোদিকে কংগ্রেসকে সমর্থন করলে তার বিনিময়ে তারা কী কী পেতে পারেন, সেটাও হয়তো বাজিয়ে দেখার চেষ্টা হবে তাদের তরফে।
বস্তুত অন্ধ্র ও বিহারের (যথাক্রমে চন্দ্রবাবু ও নাইডুর রাজ্য) জন্য ইতোমধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকার বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজের দাবি উঠেছে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এদিন (মঙ্গলবার) রাত পর্যন্ত অন্তত নীতিশ কুমার বা চন্দ্রবাবু নাইডু – কেউই প্রকাশ্যে অন্তত কোনও বিবৃতি দেননি বা ফলাফল নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়াও জানাননি। ফলে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।
ইতিমধ্যে সন্ধ্যায় দিল্লিতে খবর রটে যায়, ইন্ডিয়া জোটের তরফে এনসিপি দলের একটি গোষ্ঠীর নেতা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ শারদ পাওয়ার না কি ইতিমধ্যেই নীতিশ ও চন্দ্রবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সমর্থন চেয়েছেন।
কিন্তু পরে শারদ পাওয়ার নিজেই এ খবর অস্বীকার করে জানান, তার সঙ্গে ওই দুজনের কোনও কথাবার্তা হয়নি।
কংগ্রেস এখন কী করবে?
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের মধ্যে যারা সব চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, সেই কংগ্রেস কিন্তু এ কথা একবারও অস্বীকার করেনি যে তারাও জোটের পক্ষ থেকে সরকার গড়ানোর দাবি জানাতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লিতে ২৪ নম্বর আকবর রোডে এআইসিসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুজনেই বরং ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই তারা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এনডিএ (বর্তমান আকারে) যদিও গরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে, সেই জোটের একাধিক শরিক কিন্তু আগে কংগ্রেসেরও রাজনৈতিক সঙ্গী ছিল।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস কি বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে না কি তারাও সরকার গড়ার জন্য চেষ্টা চালাবে?
জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, “আমরা আমাদের ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শিগগিরি আলোচনায় বসব। আমার ধারণা সেই বৈঠক আগামীকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে।”
“এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে এবং এর উত্তর খোঁজা হবে। আমরা আমাদের জোট শরিকদের মর্যাদা দিই – এবং তাদের মতামত না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
আরও নির্দিষ্ট উত্তরের জন্য চাপাচাপি করা হলে রাহুল গান্ধী শুধু বলেন, ইন্ডিয়া জোট এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তারাও সেই অনুযায়ীই চলবেন।
তবে একই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের জবাব ছিল আরও ইঙ্গিতপূর্ণ – কারণ তার কথায় আভাস ছিল, কংগ্রেস এখন ‘নতুন রাজনৈতিক সঙ্গী’ খোঁজার চেষ্টা করবে।
কংগ্রেস এখন কী করবে?
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের মধ্যে যারা সব চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, সেই কংগ্রেস কিন্তু এ কথা একবারও অস্বীকার করেনি যে তারাও জোটের পক্ষ থেকে সরকার গড়ানোর দাবি জানাতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লিতে ২৪ নম্বর আকবর রোডে এআইসিসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুজনেই বরং ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই তারা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এনডিএ (বর্তমান আকারে) যদিও গরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে, সেই জোটের একাধিক শরিক কিন্তু আগে কংগ্রেসেরও রাজনৈতিক সঙ্গী ছিল।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস কি বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে না কি তারাও সরকার গড়ার জন্য চেষ্টা চালাবে?
জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, “আমরা আমাদের ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শিগগিরি আলোচনায় বসব। আমার ধারণা সেই বৈঠক আগামীকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে।”
“এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে এবং এর উত্তর খোঁজা হবে। আমরা আমাদের জোট শরিকদের মর্যাদা দিই – এবং তাদের মতামত না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
আরও নির্দিষ্ট উত্তরের জন্য চাপাচাপি করা হলে রাহুল গান্ধী শুধু বলেন, ইন্ডিয়া জোট এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তারাও সেই অনুযায়ীই চলবেন।
তবে একই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের জবাব ছিল আরও ইঙ্গিতপূর্ণ – কারণ তার কথায় আভাস ছিল, কংগ্রেস এখন ‘নতুন রাজনৈতিক সঙ্গী’ খোঁজার চেষ্টা করবে।
হিন্দিতে প্রশ্নের জবাব দিয়ে মি খাড়গে বলেন, “যতক্ষণ না আমরা জোটের শরিকদের সঙ্গে এবং নতুন শরিকদের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি … যে কীভাবে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি ও গরিষ্ঠতা পেতে পারি, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”
“আমি যদি এখনই সব কৌশল ফাঁস করে দিই, তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদি তো সতর্ক (‘হুঁশিয়ার’) হয়ে যাবেন!”
ফলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কথাবার্তা থেকে আভাস মিলেছে, তারা আপাতত সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গড়ার দাবি জানানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন না।
ইন্ডিয়াকেই ‘সাহায্য করবেন’ মমতা
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন যে তিনি বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গেই আছেন।
মিস ব্যানার্জী এদিন বলেন, “আমি অবশ্যই ইন্ডিয়াকে সাহায্য করব … ওখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি চেষ্টা করব যাতে মোদিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে পারি।”
এর আগে ভোটের মাঝপথে তিনি আচমকাই বলেছিলেন, বিরোধী জোট যদি জেতার মতো অবস্থায় চলে আসে তাহলে তিনি ইন্ডিয়াকে ‘বাইরে থেকে’ সমর্থন করে দেবেন।
তখন থেকেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস কি আদৌ ইন্ডিয়ার শরিক? কিংবা নির্বাচনের পরে কি তারা আদৌ ইন্ডিয়ার অংশ থাকবে?
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ হল এমন একটি রাজ্য যেখানে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিকদের মধ্যে কোনও নির্বাচনি সমঝোতা হয়নি।
রাজ্যের ৪২টি আসনেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বামপন্থীদের জোট প্রার্থী দিয়েছিল। কেরালাতে আবার কংগ্রেস ও বামপন্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধেও লড়েছে।
অথচ ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের সময় মমতা ব্যানার্জী ছিলেন সব চেয়ে সক্রিয় শরিকদের একজন। তিনি বহুবার প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন, এমন কী ‘ইন্ডিয়া’ নামটিও না কি তার মাথা থেকেই প্রথম বেরিয়েছিল।
এখন মঙ্গলবার রাতে এসে দেখা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া জোটের মূল শরিক দলগুলোর মধ্যে তৃণমূল সম্ভবত তৃতীয় শক্তিশালী দল হতে যাচ্ছে।
তারা যদি শেষ পর্যন্ত ২৯টি আসন পায়, তাহলে তৃণমূলের অবস্থান হবে কংগ্রেস (৯৯) ও সমাজবাদী পার্টির (৩৭) ঠিক পরেই।
ফলে এখনকার বিরোধীরা যদি সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তৃণমূলকে অবধারিতভাবে তাতে একটা সক্রিয় ভূমিকা নিতেই হবে।
জোটে তিনি আসলে আছেন কি সেই, তা নিয়ে গত বেশ কয়েক মাস ধরে রীতিমতো ধোঁয়াশা রাখার পর ভোটগণনার দিন সন্ধ্যায় এসে মমতা ব্যানার্জী অবশেষে স্পষ্ট করে দিলেন– তার দলের সমর্থন ইন্ডিয়াই পাবে।