1. admin@orieldigital.pw : rahad :
  2. Jhrepons@gmail.com : halchal :
গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘অপরাধে ঝুঁকছেন’ বেকার শ্রমিকেরা | Daily Halchal Somoy
শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
দামি ঘড়ি-আইপ্যাড দেখে লোভ হয়েছিল ‘প্রলোভন’ জয়ের গল্প লিখলেন জ্বালানি উপদেষ্টা যাত্রাবাড়ী রাজনৈতিক হালচাল-সাফকথা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ নির্বাচন বৈধ না হলে তা আয়োজনের কোনো অর্থ নেই: ড. ইউনূস নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কিনা, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থাকে স্পষ্ট করলেন ড. ইউনূস শেখ মুজিবের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক জানিয়ে শোবিজ তারকাদের পোস্ট শিল্প খাতে মন্দা কাটছে না গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘অপরাধে ঝুঁকছেন’ বেকার শ্রমিকেরা ভারতে ৩ মাসে ২০০ মানুষের ধ’র্ষ’ণের শিকার বাংলাদেশি কিশোরি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘অপরাধে ঝুঁকছেন’ বেকার শ্রমিকেরা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৪ Time View

গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘জ্বালানি সংকট, ব্যাংকিং খাতে অসহযোগিতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্ডার না থাকা, কার্যাদেশ বাতিল, ঘন ঘন শ্রমিকদের আন্দোলন, ভাঙচুরসহ বৈশ্বিক নানা সংকটে গাজীপুরে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক তৈরি পোশাক কারখানা। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন লাখো শ্রমিক। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতে। 

পুলিশ বলছে, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে যাওয়ায় অনেকেই অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছেন। কারখানা মালিক ও বিজিএমইএ এর নেতারা বলছেন, জ্বালানি সংকট নিরসন ও দ্রুত ব্যাংকের সহজ ঋণ সুবিধা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরে কোনাবাড়ি জরুন এলাকার কেয়া গ্রুপ। এই কারখানায় কাজ করতেন ১৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।  ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে প্রতিষ্ঠানে প্রথম মন্দার ধাক্কা লাগে ২০২৩ সালে। এরপর রাজনৈতিক ও ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে কারখানাটির একের পর এক ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। ঋণ খেলাপীর অভিযোগ এনে কারখানা মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। মালিকপক্ষের কোনো আবেদনেই সাড়া দেয়নি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিক মজুরি, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলসহ কারখানা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহে তীব্র সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ঘন ঘন শ্রমিকদের আন্দোলন, ভাঙচুরের ঘটনায় কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।কেয়া গ্রুপের মালিকপক্ষের দাবি, ব্যাংকের অসহযোগিতায় কারণে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে যে ফরেন কারেন্সি এসেছে তা ডিপোজিট করা হয়নি। ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলো ফরেন কারেন্সি পুরোপুরি ডিপোজিট করলে কারখানা ঋণ খেলাপি হতো না।এ ব্যাপারে কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান বলেন, ‘সাউথ ইস্ট ব্যাংক আমার এক হাজার মিলিয়ন রিয়েলাইজ পেয়েছে, কিন্তু তারা আমার ফরেন কারেন্সিতে ৬০০ মিলিয়ন ঢুকাইছে এবং ৪০০ মিলিয়ন তারা ডিপোজিট করে নাই, যার জন্য একটি প্রবলেম। পূবালী ব্যাংক ২০০ মিলিয়ন রিয়েলাইজ হয়েছে, তারা ফরেন কারেন্সিতে কোনো ডিপোজিট করে নাই। ন্যাশনাল ব্যাংক ৫৮ মিলিয়ন এবং স্টান্ডার্ড ব্যাংক ৬ মিলিয়ন ডিপোজিট করে নাই। এই চারটি ব্যাংকে আমার ঋণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তারা যদি ফরেন কারেন্সি ঢুকায় তবে সমস্যা থাকে না। এছাড়া কারখানায় গ্যাস সংকট রয়েছে।’এদিকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মহীন হয়ে পড়েন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। কর্মচাঞ্চল্যের এই প্রতিষ্ঠানটি রুপ নেয় প্রাণহীন।

ব্যাংকের অসহযোগিতায় কারণে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনব্যাংকের অসহযোগিতায় কারণে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের।কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু এই প্রতিষ্ঠান নয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গত ৩ আগষ্ট পর্যন্ত গাজীপুরের ১০৬টি কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে নিজ নিজ কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে বেকার হয়েছেন ৭৮ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।

কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকোর ১৩টিসহ মাহমুদ জিন্স, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটিল ফ্যাশন, ক্লাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলস, টি আর জেড গার্মেন্টস, রোয়া ফ্যাশনন্সসহ বিজিএমইএভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠান।

বেকার এসব শ্রমিক অনেকে কাজ না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। চাকরি ছেড়ে অটোরিকশা চালনা, ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। নারী পোশাক শ্রমিকদের মধ্যেও অনেকে অন্যত্র গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আবার অনেকে গাজীপুরে থেকে টেইলারিং, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজীপুরে শ্রমিকপল্লীতে চলছে হাহাকার। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ বিষয়ে টি আর জেড গার্মেন্টস শ্রমিক সালেহা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর এই কারখানায় কাজ করছি। এখন কারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি। নতুন কারখানায় যোগ দিতে পারি নাই। আগের মতো সুযোগ-সুবিধা না পেলে চাকরি করে কী হবে।’

এদিকে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। তারা ভাঙচুর, বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটান। এতে প্রায় সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।

শুধু শ্রমিক নয়, কারখানা বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। কারখানা এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ি ভাড়াসহ নানা ক্ষুদ্র পেশায় ধস নেমেছে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাড়া বাসা বদল করে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়েছেন অনেকে।

কেয়া গ্রুপের সামনে কথা হয় কয়েকজন দোকানীর সঙ্গে। তারা জানান, আগে তাদের দিনে ১২-১৫  হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এখন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে পরিবার নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের।

জরুন এলাকার মুদি দোকানি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন দোকানে ১০-১৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন সেটি ১-২ হাজারে নেমে এসেছে। এলাকায় আগের মতো বেচাকেনা নেই।’

গাছা এলাকার বাড়িওয়ালা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক সময় বাসা ভাড়ার জন্য প্রতিদিন লোক আসতেন। এখন ভাড়াটিয়ার চাপ কমে গেছে। অনেকের বাসা খালিও থাকছে। এ অবস্থায় বাড়িতে বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে।’

বিজিএমইএ ও পোশাক কারখানা মালিকেরা বলছেন, জ্বালানি সংকট নিরসনের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও কারখানা চালুর বিষয়ে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এ নিয়ে এসি শিল্প এস্টেট ও স্টাইলিশ গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি ব্যাংকের সহযোগীতা পাচ্ছে না মালিকেরা। ফলে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে, বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকেরা। অনেকেই গ্রামে চলে গেছে। এটা অর্থনীতির জন্য খারাপ খবর। ব্যাংক সহায়তা, পোর্ট সুবিধাসহ এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন।’

কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনঅন্যদিকে তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ায় অনেক শ্রমিক চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে মনে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার শ্রমিক শ্রেণি যাদের পেটে ভাত বা খাবার যোগান করতে পারেনি, তারা রাস্তায় বেরিয়ে ছিনতাই বা অন্য অপরাধে জড়িয়ে যায়। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে যে কোনো জায়গায় অপরাধ বেড়ে যায় এটা স্বাভাবিক। কারখানা বন্ধ হওয়াটাকে আমরা হুমকি মনে করছি। ৫ আগস্টের পর বেকার শ্রমিকদের একটি অংশ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।’

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার বলেন, ‘মালিকানা পরিবর্তন, ব্যাংকঋণ রিশিডিউল না করা, কাজ না থাকা ইত্যাদি কারণে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। তবে আর্থিক সংকটের কারণেই বন্ধ হচ্ছে বেশিরভাগ কারখানা।’

মালিক-শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় ৫ হাজার কলকারখানা রয়েছে যার মধ্যে দুই হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানা। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা এক হাজার ১৫৪টি

বেড়ায় সেপটিক ট্যাংকে আটকে পড়া নির্মাণ শ্রমিকদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট
আশুলিয়ায় নাসা গ্রুপের দুটি কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized BY WooHostBD