লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের নিবন্ধনকৃত ৫৪০ জন জেলের নামে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে নানা ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে তালিকায় নাম না থাকা কিছু জেলে চাল না পাওয়ায় চেয়ারম্যান মীর্জা আশ্রাফুজ্জামান রাসেলের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান রাসেলের দাবি, তালিকায় নাম না থাকা জেলেরা চাল না পেয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা উসকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে জেলেদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। তিনি নিয়মানুযায়ী চাল বিতরণ করাসহ কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, মেঘনা নদীর চাদপুরের ষাটনল থেকে রামগতির বয়ারচর পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ প্রজনন মওসুম উপলক্ষে তিনমাস যে কোনো ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষনা করে সরকার। ওই তিনমাস মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা প্রকৃত জেলেদের মাথাপিচু ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দিতে জেলে নিবন্ধন তালিকা তৈরী করা হয়। সে অনুযায়ী তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে ৮শ’৫০জন জেলের তালিকা তৈরী হলেও উপজেলা মৎস অফিস ৫৪০ জন জেলের নামে চাল বরাদ্ধ দেন। বরাদ্ধ অনুযায়ী ৫৪০ জন প্রকৃত জেলের নামের তালিকা তৈরী করে তা উপজেলা মৎস অফিসে জমা দেন চেয়ারম্যান। পরে মৎস কর্মকর্তা ওই তালিকায় থাকা জেলেদের নাম নিবন্ধন (ডাটাবেস) করে তাদের নামে মাথাপিচু ৪০ কেজি হারে চাল বরাদ্দ দেন। নিয়মানুযায়ী মৎস অফিসের নিযুক্ত ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে শুক্রবার ওই চাল বিতরণ করেন চেয়ারম্যান রাসেল। এতে অনিবন্ধিত ও তালিকায় নাম না থাকা জেলেরা চাল না পেয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ তোলে।
সরজমিন গেলে তালিকাভুক্ত জেলে আব্দুল বারেক, নুর সোলাইমান ও সিরাজ মাঝি বলেন, আমরা প্রকৃত জেলে । তালিকায় আমাদের নামও আছে কিন্তু চেয়ারম্যান আমাদের চাল দেননি। তিনি চাল নিতে আসলে আমাদের পাত্তাই দেননি।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওই ইউনিয়নের নিবন্ধনকৃত ৫৪০ জন জেলের সুফলভোগী হালনাগাদ চুড়ান্ত তালিকায় অভিযোগকারী তিনজন জেলের কারোই নাম পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মৎস কর্মকর্তার নিযুক্ত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যংকের মাঠ সহকারি মো. আলাউদ্দিন জানান,চাল বিতরণকালে আমি উপস্থিত ছিলাম কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়নি।
তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মীর্জা আশ্রাফুজ্জামান রাসেল বলেন, আমার ইউনিয়নে তালিকাধিন ৮৫০ জন জেলে থাকলেও মৎস কর্মকর্তা ৫৪০ জন জেলের নামে চাল বরাদ্দ দেন। আমি ৪০ কেজির চেয়ে কিছুটা কমিয়ে নিবন্ধনহীন বাধ পড়া জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মৎস কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছিলাম। সাড়া না পাওয়ায় শুধুমাত্র নিবন্ধনকৃতদের নামে বরাদ্দকৃত দুই মাসের বরাদ্দের ৮০ কেজি চাল একত্রে বিতরণ করেছি। এতে বাধ পড়া জেলেরা আমার বিরুদ্ধে তাদের চাল দেইনি বলে অপবাদ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হওয়া একটি প্রতিপক্ষ জেলেদের উসকে দিয়ে এসব করাচ্ছে। তবে মিথ্যা দিয়ে সত্যকে কখনো আড়াল করা যায়না।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তুর্য্য শাহা জানান, আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। কোন ইউনিয়নে কতজনের নামে বরাদ্ধ তা আমার জানা নেই। তবে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে চাল বিতরণে আমার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল। কোনো অনিয়মের খবর পাইনি বলে জানান তিনি।