ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া যে খবর পরিবেশন করেছে তাতে অসঙ্গতি দেখা গিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে অসংখ্য পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যা জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি প্রদত্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করেছে।
কীভাবে এবং কখন ঘটনাস্থল সনাক্ত করা হয়েছিল তার বিভিন্ন বিবরণসহ প্রাথমিক খবরে বেশ অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদনগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এটি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের জন্য তাদের প্রস্তুত করার একটি কৌশল হতে পারে।ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফারস নিউজ প্রথম ঘটনাটি অস্বীকার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। শুরুতে সংবাদ মাধ্যমটির ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছিল, ‘প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সফর সঙ্গীদের বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার’ শিরোনামে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।ফারস নিউজ আরও দাবি করেছে, পূর্ব আজারবাইজানের উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশার কারণে রাষ্ট্রপতি রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করেছে এবং গাড়িতে করে তাদের যাত্রা চলছে।পরে অবশ্য সংবাদ মাধ্যমটি তার প্রাথমিক বিবৃতি প্রত্যাহার করে লিখেছে, রাইসির সফরসঙ্গীদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার ‘হার্ড ল্যান্ডিং বা বিপজ্জনক অবতরণ’ করেছে।রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী আরআইবিকে দেওয়া লাইভ সাক্ষাৎকারে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বোর্ডে থাকা কিছু ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে।আইআরআইবি-তে ইরানের নির্বাহী বিষয়ক উপ-প্রেসিডেন্ট মোহসেন মনসুরি বলেছেন, একই হেলিকপ্টারে রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গীর দুই সদস্য সফলভাবে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই যোগাযোগের কারণে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বাতাস ততটা তীব্র ছিল না যতটা প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল।তার এই বর্ণনা আরও জটিল হয়ে যায় যখন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাবরিজের জুমার নামাজের ইমাম মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম রাইসির সঙ্গে ছিলেন। তিনি কথিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। এমনকি তিনি উদ্ধারকারীদেরও শুনতে পাচ্ছেন।এই দাবিটির পরে প্রশ্ন আসে তাহলে নিশ্চয়ই উদ্ধারকারীরা কার্যকরী জিপিএসের অভাবে দুর্ঘটনাস্থল সনাক্ত করতে পারেনি। আল-হাশেম যদি ঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারতো তাহলে উদ্ধারকারীরা কেনো জিপিএস ট্র্যাক করে ঘটনাস্থল সনাক্ত করতে পারেনি।পূর্ব আজারবাইজানের ডেপুটি গভর্নরও নিশ্চিত করেছেন, বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। দুটি নিরাপদে অবতরণ করেছে এবং একটি বিধ্বস্ত হয়েছে।দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার বিভ্রান্তিপ্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের প্রায় দুই ঘণ্টা পর আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার আনুমানিক অবস্থান চিহ্নিত করেছে। একটি মানচিত্র ব্যবহার করে তারা ধ্বংসাবশেষের এলাকা চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া ও প্রতিকূল ভূখণ্ডের কারণে উদ্ধারকারীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।প্রাথমিকভাবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইআরআইবি-এর মতো রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বৈরি আবহওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। তবে এ বিষয়ে ক্রমাগত প্রদিবেদন প্রকাশিত হতে থাকায় বহরে থাকা বাকি দুটি হেলিকপ্টারের কথা ধীরে ধীরে কমানো হয়েছে।এ বর্ণনা থেকে প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি বৈরি আবহাওয়ার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে তবে বাকি দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে গেলো কীভাবে। এরপরই রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে নজর না দিয়ে বরং বৈরি আবহাওয়ার ওপর বেশি বেশি জোর দেওয়া হতে থাকে।অনুসন্ধান কাজ চলাকালীন সুপ্রিম লিডারের মন্তব্যরাইসির মৃত্যু খবর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি জনসমক্ষে বিবৃতি দেন।রাইসি সম্পর্কে এবং প্রেসিডেন্ট ছাড়া দেশের ভবিষ্যত কেমন হবে তা নিয়ে খামেনির মন্তব্য এখানে লক্ষ্যণীয়। তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হবে।বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ড্রোন হামলায় যখন আইআরজিসি কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি নিহত হয়েছিল তখন খামেনি কাঁদতে কাঁদতে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাইসির মৃত্যুর খবর ঘোষণার সময় তার কণ্ঠে সেরকম কোনো আবেগ দেখা যায়নি।ইরান ও তুরস্কের বিরোধপূর্ণ দাবিবিধ্বস্তের খবর পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাসনিম-এর মতো বার্তা সংগুলোস্থা ধ্বংসাবশেষের সঠিক অবস্থান জানার দাবি করেছে। তবে এসব দাবির সঙ্গে রেড ক্রিসেন্টের বিবৃতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলেছিল, অনুমানের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল অনুসন্ধান করছে। সেরকম কোনো সাফল্য পাওয়া যায়নি।পূর্ব আজারবাইজানের ক্যালেবার এমপি হোসেইন হাতামি হেলিকপ্টারের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের দাবি অস্বীকার করার পর ঘটানি আরও বিভ্রান্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। হাতামি বলেছিলেন, রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরিস্থিতি যেমন ছিল তাতে এভাবে যোগাযোগের চিন্তা করাও অবাস্তব।১৫ ঘণ্টার বেশি সময় পরে অনুসন্ধান শেষ হয় এবং ইরানি কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রস্তাব সত্ত্বেও ধ্বংসাবশেষ সনাক্তকরণে বিদেশি সহায়তা থাকার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে ইরান।ইরানি উদ্ধারকারীরা প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনাস্থল খুঁজে পেতে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। এতে তুরস্ক ও রাশিয়াকে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপরই তুরস্ক একটি নাইট ভিশন ড্রোন মোতায়েন করে ইরানকে সহায়তা করে।পরস্পরবিরোধী দাবিতুরস্কের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রেড ক্রিসেন্টের প্রধান পীর-হোসেন কোলিভান্দ এবং আইআরজিসি কমান্ডার আসগর আব্বাসঝোলিসহ ইরানের কর্মকর্তারা জোর গলায় বলেছেন, তুর্কি ড্রোনের পাঠানো তথ্যে ভুল ছ