বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে তা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলার কেজি ১৬০ টাকা ছাড়িয়েছে। বেগুনও বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। পটোল, কাঁকরোল, ঢ্যাঁড়শসহ অন্যান্য সবজির দামও বাড়তি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর বাজার, নিউ মার্কেট ও কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন সবজির দামের এ চিত্র পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আসছে না। এসব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সবজি বাজারে।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে প্রতি কেজি করলা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, বেগুন ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টম্যাটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে শীতকালীন সবজি শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপি উঠেছে। তবে দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি শিম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট আকারের একটি ফুলকপি ৭০ টাকা ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, জালি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।
গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হলেও গতকাল বাজারে তা ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে আলুর দাম বাড়েনি। আগের দর ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতেই আলু বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম এতটা বাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। গতকাল কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করলার কেজি ১৬০ টাকা! এটা ভাবা যায়? অন্যান্য সবজির দামও অনেক বেড়েছে। সবজির দাম হঠাত্ এতটা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এই বাজারে সবজি বিক্রেতা নজরুল বলেন, গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সবজির দাম না বেড়ে উপায় আছে? তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। এই বিক্রেতা তার দোকান দেখিয়ে বলেন, অন্য সময় দোকানে অনেক সবজি থাকত। এখন নেই। বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এছাড়া, দুর্গাপূজার কারণে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কাঁচা মরিচের দামটা বেশি বেড়েছে। ছুটি শেষ হলেই কাঁচা মরিচের বাজার ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম আরো বেড়েছে। গতকাল প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ থেকে ১৭৮ টাকায় বিক্রি হয়। যা এক সপ্তাহ আগে ১৭০ থেকে ১৭৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের গতকালের বাজারদরের প্রতিবেদনেও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরবরাহ সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। ফলে ভোজ্য তেলের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সয়াবিন ও পাম ওয়েলের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ভোজ্য তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি মেনুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু গত সপ্তাহে সচিবালয়ে ভোজ্য তেল ব্যবসাীয়দের সঙ্গে এক বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে এক টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া, পাম অয়েলের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়নি। তবে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত মানেনি ভোজ্য তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে চলতি মাসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবার বৈঠকে বসবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মাছের দামে তেমন হেরফের হয়নি।
গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতল মাছ আকারভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, কই ২৩০ থেকে ২৭০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, কোরাল ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন ইলিশের মৌসুম হলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছটি। গতকাল বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, মাংসের মধ্যে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
https://shorturl.fm/V7TYi
https://shorturl.fm/rXSkj
https://shorturl.fm/twu99
https://shorturl.fm/sanqH