বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করতে ঢাকা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী ও রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিবুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুর রহমানের অপসারণ ইস্যুতে চলমান বিক্ষোভের সময় ফরেনসিক প্রতিবেদন টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘আবু সাঈদের বুক গুলিতে ঝাঁঝরা ছিল। আমাকে ঢাকা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তুমি সরকারি চাকরি করে কীভাবে সরকারের বিপক্ষে এ রিপোর্ট দিতে পারো। আমি রিপোর্ট যখন ফাইনালি দিতে যাই, তার আগে ছয় বার আমাকে রিপোর্ট পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এরপরেও উনাদের মনের মতো হয়নি।’
সাংবাদিকদের ডাঃ রাজিবুল বলেন, উনারা চেয়েছিলেন আমি যেন হেড ইনজুরি দিয়ে ইউরেজোনিক শক দেখিয়ে দেই। কিন্তু আমি তাদের চাপের কাছে মাথা নত করিনি। ওই সময় ভাইস প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান চার্জে ছিলেন, স্বাচিপের নেতারা ছিলেন। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। তাদের সামনে আমাকে বাধ্য হয়েই রিপোর্টে সাইন করতে হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন জনকে দিয়ে ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়েছিল পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকজনকে আমি চিনি। তারা হলেন মহানগরের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোঃ আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) মোঃ আরিফুজ্জামান এবং দাড়িওয়ালা এক পুলিশ কর্মকর্তা। বাকিদের নাম জানি না।
এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ ডাঃ মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর রায়ান্স হোটেলের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার ঘটনায় ফরেনসিক প্রতিবেদন টেম্পারিং করার জন্য তিনি চাপ দেননি বরং সঠিক রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলেছেন। প্রতিবেদন দেওয়ার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আমি আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনে কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি। বরং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি।
গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয় ডা. মাহফুজুর রহমানকে। চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন।