রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়ে ডায়মন্ডের বদলে উন্নতমানের কাচের টুকরো বিক্রি করার অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। গতকাল মঙ্গলবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে দিলীপ আগরওয়ালের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে হুন্ডিতে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের প্রায় ৩০টি শোরুম রয়েছে। এসব শোরুম থেকে দিনে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ডায়মন্ড বিক্রি করা হলেও বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৫ বছরে কোনো ভ্যাট দেয়নি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। এনবিআরের কর্মকর্তাদের হিসাবে ২৮টি শোরুম থেকে বছরে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন দিলীপ। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ভ্যাট দেয়নি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ভ্যাট ফাঁকি ও দিলীপ আগরওয়ালের আয়কর নথি তদন্ত শুরু করলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিলীপ তদন্ত এগোতে দেননি।
অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেখানে অভিযোগ করা হয় সোনা ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ আগরওয়ালার রাজস্ব ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কয়েক জন বিক্রয়কর্মী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে দিলীপ আগরওয়ালাকে ৭৭০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তখন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভিভিআইপি একজন ব্যক্তি ফোন করে সেই জরিমানা স্থগিত করে দেন।
দিলীপ কুমার আগরওয়াল আওয়ামী লীগের সর্বশেষ দুই কমিটির উপকমিটিতে শিল্পবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। ওবায়দুল কাদের ও সালমান এফ রহমানকে ম্যানেজ করে তিনি উপকমিটিতে জায়গা করে নেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের ডোনার ছিলেন এবং সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সর্বশেষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেন্সে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে দিলীপ আগরওয়ালের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডায় গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শিবচরের সন্ন্যাসীরচর এলাকার হূদয় হোসেন শিহাব নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামির তালিকায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ আগরওয়ালের নাম রয়েছে।
এসব বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়ে ডায়মন্ডের বদলে উন্নতমানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ আরও বলেন, দুবাই-সিংগাপুরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন দিলীপ কুমার আগরওয়াল। ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে দিলীপ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে।
এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে পাওয়ায় সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করেছে বলেও জানান বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।