৪০ বছরের ব্যাবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। গতকাল রবিবার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কে আজাদ এই কথা বলেন। প্রথম আলো রাজধানীর একটি হোটেলে এ গোলটেবিলের আয়োজন করেছে। সেখানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকরা অংশ নিয়েছেন।
সমপ্রতি এক ব্র্যান্ড অংশীদারের সঙ্গে বৈঠকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ কে আজাদ বলেন, আমার এক বড় ব্র্যান্ড হেড অফিসে ডেকে জানায়, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না। এটা শুনে এ কে আজাদ হতাশ হয়ে একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন। পরদিন বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উপদেষ্টা জানান, ৯৫ শতাংশ সমস্যা তারা সমাধান করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা কী করবেন।
এই পরিস্থিতিতে এ কে আজাদ ক্রেতাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার এক ক্রেতা ই-মেইলে জানান, ১ তারিখ থেকে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্ক বসবে, তা সরানো না গেলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ আমাকে বহন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, আমি সেই শুল্ক কীভাবে বহন করব। বক্তব্যে ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এ কে আজাদ বলেন, সেখানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, প্রতিটি স্তরে আলোচনা করেছেন। অথচ বাংলাদেশে আমরা এমন সুযোগ পাইনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা বলছেন, সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। কিন্তু তখন আমরা যাব কোথায়? আমাদের কার কাছে ফেলে রাখছেন। সবার ধারণা, আমাদের মাথার ওপর একজন আছেন। তিনি এটা ফুঁ দিয়ে দেবেন আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যার জন্য আমাদের কোনোরকম মূল্যায়ন করা হচ্ছে না; কোনো লবিস্ট নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে আমরা এমন একটা অত্যন্ত নিরপরাধ, নির্দোষ ও নিষ্পাপ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করছি। এর ব্যাখ্যা দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা এখানে বসে এত কিছু বুঝি আর ওনারা (সরকারে থাকা ব্যক্তিরা) বোঝেন না, আমার কাছে তো এটি আশ্চর্য লাগে। এ জন্যই বললাম এত নির্দোষ, নিরপরাধ ও নিষ্পাপ সরকার আমি দেখিনি।
কোনো দুর্বল সরকার সফল দর-কষাকষি করেছে ইতিহাসে এ নজির খুব কম। এটি এমন এক সমন্বয়হীন সরকার, যার বিভিন্ন কাজের নেতৃত্বে কে আছেন, এটা বোঝা যায় না। এ ছাড়া এ ধরনের সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা না থাকলে সেটিও বড় দুর্বলতার অংশ হয়। বর্তমানে যেহেতু সরকার দুর্বল, সেহেতু শুল্কের আলোচনায় দুর্বলতার ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, গতকাল থেকে আমরা লবিস্ট নিয়োগে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছি। তবে লবিস্টদের কাছ থেকে সাড়া কম পাচ্ছি। তার কারণ, অধিকাংশই বিভিন্ন দেশের পক্ষে যুক্ত হয়ে গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তিন দিন আগেও আশাবাদী ছিলাম। যারা সরাসরি দর-কষাকষি করছেন, ওনারা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, তারা খুবই আত্মবিশ্বাসী। তবে দুই দিন আগে থেকে কানাঘুষা চলছে যে তারা বুঝতে পেরেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) পালটা শুল্ক কমানোর চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ নয়। ট্রাম্প প্রশাসন হচ্ছে সেই কর্তৃপক্ষ। এটা বুঝতে এত সময় লাগল।