কোথাও মিলছে আইস, কোথাও ইয়াবা, কোথাও আবার ফেনসিডিল। রাতের অন্ধকার যত বাড়ে বেচাকেনা ততই জমে। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের দুই শতাধিক স্থানে প্রশাসনের চোখের সামনেই চলে মাদকের বেচাকেনা। মোবাইলে সংকেত পেয়ে বিক্রেতারা ক্রেতার বাসায় কৌশলে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আট মাসে মাদক কারবারের ১৯ গডফাদারকে ধরা সম্ভব হয়েছে। তবে একই অধিপ্তরের হিসাবে এ ধরনের গডফাদার গোটা জেলায় সব মিলিয়ে ৬৪ জন। বাকি ৪৫ জনকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পাশের মায়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজার হয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে চট্টগ্রামে আসছে ইয়াবা।একই দেশ থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি হয়েও সড়কপথে চট্টগ্রাম নগরে আসছে মাদক। ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ বেশি শক্তিশালী, মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ‘ক্রিস্টাল মেথ’ (আইস) আসছে একই সীমান্ত থেকে। এরই মধ্যে কোকেনের একাধিক বড় চালান চট্টগ্রামে ধরা পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা বাড়তে থাকে।ইয়াবার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ শক্তিশালী ক্রিস্টাল মেথ (আইস)। মায়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান হয়ে তা চট্টগ্রামে আসছে। কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত থেকে আসছে বিপুল গাঁজা ও ফেনসিডিল। অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়া ১৯ জনের একজন মো. ওসমান গনি (৪০)। তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি মাদক ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ইয়াবাসহ তাঁকে ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। একই দিন ফরিদুল আলম (৫৮) নামে অন্য অপরাধীও ধরা পড়ে। ফরিদের বিরুদ্ধে আটটি মাদকসংক্রান্ত মামলা রয়েছে। আরেক মাদক ব্যবসার হোতা ওয়াসীম চৌধুরীকে (৩২) গত বছরের ২৮ নভেম্বর ধরা হয়। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার গত রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তালিকায় থাকা ৬৪ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি করে মামলা আছে। গ্রেপ্তারের বাইরে থাকা গডফাদারদের নাম অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এসব নাম এখন অভিযানের স্বার্থে প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় দীর্ঘদিন মাদক গডফাদারদের ধরা যায়নি। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা এই পর্যন্ত (গত রবিবার) ১৯ জনকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি।’গত শনিবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের আইস ফ্যাক্টরি সড়কের বরিশাল কলোনি, কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, বিআরটিসি, পুরনো রেলস্টেশন, রেয়াজুদ্দিন বাজার, পলোগ্রাউন্ড, লালখানবাজার, সিআরবি, ষোলশহর, অক্সিজেনসহ আরো কয়েকটি এলাকায় অবাধে মাদকের বেচাকেনা চলতে দেখা গেছে। ক্রেতা সেজে এসব এলাকায় বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেল, প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম নগরের ১৪টি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকেন্দ্রে গত শনিবার পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ২৯৬ জন। এর মধ্যে গত মার্চে ৭০ জন ভর্তি হন। তাঁদের ৪০ জন ইয়াবা আসক্ত, তাদের একটি অংশ শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় পাঁচ হাজার বন্দি রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এসব আসামি কারাগারে আছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কারাগারে এসব বন্দির মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মাদক মামলার আসামি। নগরের ১৫ থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন স্পটে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুল করিম গত শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’ র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ কে এম মোজাফফর হোসেন জানান, দুই বছর তিন মাসে ৫৯১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।