1. admin@orieldigital.pw : rahad :
  2. Jhrepons@gmail.com : halchal :
প্রাথমিক শ্রেণির শিশুর জীবনধারা | Daily Halchal Somoy
মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
যুদ্ধবিরতি ভেঙে দৈনিক ১০০ শিশুকে হত্যা-আহত করেছে ইসরায়েল বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির ডিপিডিসির বিলিং সহকারি “‘আলী” যেন এক বর্বরতার ভয়ংকর মিশনের  নাম !   ছাত্র প্রতিনিধিরা পদত্যাগ না করলে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে না: ইশরাক সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ড. ইউনূস ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল আসেনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ডাকাত আতঙ্ক সাভারে ফের চলন্ত বাসে ডাকাতি, বাসচালক-সহকারী আটক নিজ দেশে ফেরার সংবাদে আনন্দিত রোহিঙ্গারা রিকশা-গরু বিক্রি করেও জুলাই যোদ্ধা হৃদয়কে বাঁচাতে পারলেন না বাবা পুলিশের লুট হওয়া শটগান ও সাত রাউন্ড গুলিসহ ২ জন আটক

প্রাথমিক শ্রেণির শিশুর জীবনধারা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২০৭ Time View

প্রাথমিক বা প্রাইমারি স্তরের শিশু ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে এদের অবস্থান। এ হচ্ছে মধ্য শৈশবকাল, যাকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এ বয়সের শিশুকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার কাজে বাবা-মার আঁচলের আড়ালে সর্বদা পাহারা দিয়ে রাখতে নেই। সহপাঠীদের সঙ্গে তাকে মিশতে দেওয়া উচিত, যেন তাদের মধ্যে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে। এ বয়সে তাকে সুযোগ করে দিতে হবে যেন সে বাইরের দুনিয়ায় বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। যাতে বাধা ও বিপত্তিকে সাহস ও বুদ্ধির সঙ্গে মোকাবিলা করে জয়যুক্ত হতে শেখে।

* দৈহিক বৃদ্ধির খতিয়ান

এ সময়টাতে একজন শিশু প্রতি বছর গড়ে ওজনে ৩-৫ কেজি (৭ পাউন্ড) এবং উচ্চতায় ৬ সে.মি. (২.৫ ইঞ্চি)-এর মতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তবে তুলনামূলকভাবে পুরো সময়জুড়ে মাথার বেড় বাড়ে কেবল মাত্র ২-৩ সে.মি। কেননা এখন ব্রেইনের বৃদ্ধি ঘটে অনেক ধীরলয়ে। ৭ বছর বয়সের মধ্যে স্নায়ুজালিকার আবরণীকর্ম সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়। শরীরের গঠন লিকলিকে বা স্থূলদেহী কিংবা মাঝামাঝি যে রকমের হোক না কেন, পুরো মধ্যশৈশবে তা একই রকম থাকে।

* দুধদাঁত পড়ে স্থায়ী দাঁত গজানোর নিয়ম

মুখের মাঝ ও নিচের অংশে ক্রমশ বাড়ে। এ সময়ে চোখে পড়ার মতো ঘটনা হচ্ছে- দুধদাঁত পড়তে শুরু করা, যা সাধারণভাবে প্রথম মোলার দাঁত গজানোর পরপর অর্থাৎ শিশুর ৬ বছর বয়সের দিকে শুরু হয়। সচরাচরভাবে প্রতি বছর গড়ে ৪টি দুধদাঁত পড়ে গিয়ে তার স্থলে স্থায়ী দাঁত উঠে। এসময় প্রাকৃতিক নিয়মে গ্ল্যান্ডের টিস্যুগুলো স্ফীত হয়, যে কারণে টনসিল ও এডিনয়েডগুলো আকারে বড় দেখায়, এবং যার জন্য কখনো বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাইতে হতে পারে।

* সৃজনশীল কাজে সফলতা

দৈহিক শক্তি, স্ট্যামিনা, বিভিন্ন কাজে দক্ষতা ক্রমাগত বাড়ে। নৃত্যকলা, বাস্কেটবল খেলা বা পিয়ানো বাজানোর মতো সৃজনশীল জটিল ও সূক্ষ্ম কর্মে সে এখন নৈপূণ্য প্রদর্শন করতে পারে। তবে এসব পারদর্শিতা অর্জনের জন্য আপন ক্ষমতা ছাড়াও নিজ আগ্রহ, যথাযথ পরিবেশ ও ট্রেনিং-এর সুযোগ, বংশগত ধাত ইত্যাদির প্রভাব ও প্রয়োজন। অন্যদিকে অতি আলসেমিপনা শিশুকে স্থূলদেহী সম্পন্ন হওয়া ও হার্টের অসুখে ভোগার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ বয়সে শিশুর যৌনাঙ্গগুলো অপরিণত থাকে। কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কৌতূহল, যৌন অনুভূতি অনেক শিশুর মধ্যে দেখা যায় এবং যৌবন প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে তা বেড়ে চলে। সবার ক্ষেত্রে না হলেও কারও কারও মধ্যে মাসটারবেশন করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ঘর ও সমাজের বিদ্যমান কালচার বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

* স্বাস্থ্য নিয়ে শিশুর ভাবনা ও অভিভাবকের করণীয়

* স্বাস্থ্য নিয়ে শিশুর ভাবনা ও অভিভাবকের করণীয়

সম্পূর্ণ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েও স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে আকার, ধারণ ও ক্ষমতা প্রয়োগে অনেক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এমনকি নিজ শরীর নিয়ে কোনো শিশু গর্ব করে তো, অন্যজন লজ্জায় কুঁকড়িয়ে থাকে। নিজের মধ্যে শারীরিক কোনো ত্রুটি রয়েছে, এ ভয়ে কোনো কোনো শিশু ব্যায়াম করা থেকে বা শরীরে কোনো অসুখ ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ডাক্তার দেখানো থেকে বিরত থাকে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুকে রুটিন চেকআপ করানো হলে সে নিজের বিশ্বাস ফিরে পায়, এবং তার অমূলক ভয়গুলো কেটে যায়। ছেলেমেয়ের শরীর ও দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে মা-বাবাও উদ্বিগ্ন থাকেন। মা-বাবা ও অভিভাবকের বোঝা উচিত-সুস্থ সবল স্বাস্থ্য পাওয়া, অসুখে ভোগার ঝুঁকি, শারীরিক গঠনের প্রকারভেদ, একেক শিশুর বেলায় একেক রকম। আপন শিশুর বেলায় যা ঘটছে, তা তাদের স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে প্রয়োজনে ‘স্বাস্থ্য চেকআপ’ করিয়ে নিতে হবে। এসময় শিশুর দৈনন্দিন কায়িক শ্রমের বিবরণ শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে পেশ করা ভালো। শিশুকে দল বেঁধে খেলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হলে সে দক্ষ ও টিমওয়ার্কে সুনিপুণভাবে নিজেকে গড়ে তোলে, নিজের ফিটনেস বজায় রাখতে সক্ষম হয়।

তবে এসবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে যদি সে বাড়তি কোনো চাপের সম্মুখীন হয়, তা পরিহার করা ভালো। কেননা তা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুর শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা আছে, এমন বিপজ্জনক খেলাধুলা (যেমন-ভারোত্তলন) থেকে বিরত রাখা উচিত। তাতে করে তার অপরিণত হাড্ডি-অস্থি-জয়েন্টগুলো চোট পাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।

* লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া

 

বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ফলে তার জ্ঞানবুদ্ধির স্তর ধাপে ধাপে বিকশিত হয়। এ পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকের যে কোনো মৌলিক বিষয়ে দখল পেতে শিশুর বুদ্ধি, ভাষাজ্ঞান ও উপলব্ধি করার ক্ষমতা-এ তিনের ভূমিকা প্রধান। কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া ও তা বুঝতে পারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষার যে কোনো পর্বে এই দুয়ের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। বুঝতে না পারার কারণে শিশুর মনোসংযোগ ঘটে না। তেমনিভাবে কোনো শিশু যদি প্রথম থেকেই বিষয়টির প্রতি অমনোযোগী হয়ে থাকে, তবে সে তা বুঝতে সক্ষম হবে না। প্রথম দিকে না হলেও আরও পরে একজন শিশু ক্লাসের পুরো ৪৫ মিনিট সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ মনোযোগ ধরে থাকার ক্ষমতা লাভ করে।

* স্কুলের পাঠক্রম তৈরি হবে কী নিয়মে

স্কুলে প্রবেশের প্রথম ২ বছরকাল শিশুকে পড়তে শেখা, লিখতে পারা ও অঙ্কের মৌলিক কিছু নিয়মাবলী জানানোর মতো প্রাথমিক ভিত্তি পাইয়ে দেওয়া হয়। পরে এসব মৌলিক নিয়মগুলোকে জটিল থেকে জটিলতার বিন্যাসে পরিবেশন করে পাঠক্রম তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনো প্যারাগ্রাফ পড়িয়ে শিশুকে বিভিন্ন শব্দ শেখানো নয়, বরং অনুচ্ছেদের ভাববস্তু অনুধাবন করতে শেখানোই এখন প্রধান লক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তেমনি করে কিছু লিখতে দিয়ে বানান শেখানোর চেয়ে বাক্যের গঠনগত দিকটি উন্মোচিত করা এখনকার মূল উদ্দেশ্য। এরপর আস্তে আস্তে পাঠ্য সামগ্রীর পরিমাণ বাড়ানো হয়, যেমনটি করা হয় কিছুটা দুরূহ ফর্মের। কিন্তু যে শিশুটির প্রাথমিক ভিত মজবুত থাকে, এই বাড়তি পড়ার চাপ বা ক্রমশঃ কঠিনতর পর্বে অভিযান, তার জন্য কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে না।

* যেসব বিষয়ে মা-বাবার নজর থাকা উচিত

কোনো অসুখের কারণ ও তার বিধিসম্মত চিকিৎসা এ বয়সের শিশুকে বলে বোঝানো সম্ভব। যেমন নিউমোনিয়া রোগে শরীরের শ্বেতকণিকাগুলো ফুসফুসের অভ্যন্তরে পৌঁছে জীবাণুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়-এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখাটুকু সে মেনে নেয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার মনের অলিন্দে এ বিশ্বাস বাসা বাঁধে যে, মা-বাবাকে অমান্য করার কারণে সে নিউমোনিয়ায় ভুগে প্রতিফল হিসাবে শাস্তি পাচ্ছে। শিশুর একাডেমিক বা ক্লাশরুমে আচার আচরণ সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যা বা তার উপসগার্দি (যেমন-জ্বর) ভালোমতো খতিয়ে দেখা উচিত। শিশুর মানসিক বিকাশ, বাক্শক্তি, অমনোযোগিতা, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা বা দীর্ঘমেয়াদি যে কোনো অসুখ উপেক্ষা না করে যথাযথ চিকিৎসা করানো অভিভাবকের আশু কর্তব্য। ‘ল্যাংগুয়েজ থেরাপির’ মতো চিকিৎসার সঠিক সময়ে প্রয়োগ ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কিত কারণে শিশুর লেখাপড়ায় নষ্ট মনোযোগিতা ফিরিয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এখন পিতা-মাতার প্রতি তার নির্ভরতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। এখন ঘরের চেয়ে বাইরের প্রতি সে বেশি আকর্ষণ অনুভব করে থাকে। ঘরের পরিবেশ, স্কুলের চৌহদ্দি এবং প্রতিবেশীজন এ তিনকে ঘিরে গড়ে ওঠে শিশুর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোবিকাশ। তবে ঘরের ভূমিকাই প্রধান, যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। মনে রাখতে হবে মাতা-পিতার সঙ্গে সন্তানের যে সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়, তাই তার জন্য তৈরি করে শ্রেষ্ঠ আসন। এ হচ্ছে শিশুর জন্য সদাজাগ্রত নিরাপত্তাস্থল, যা শিশুকে ভবিষ্যতের পথ কেটে দেয়, তার সুস্থ পরিচালনাতে ইন্ধন জোগায়।

* সর্বদা উৎসাহ দিতে হবে

স্কুল ও স্কুলের বাইরে প্রতিটি ক্ষেত্রে আপন সন্তানের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য মা-বাবার চেষ্টার কমতি থাকে না। এ সময় সন্তানের সাফল্যই কেবল তারা মেনে নেন, তা সাদরে বরণ করেন, তা নিয়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেন। কিন্তু শিশু যদি কোনখানে ব্যর্থ হয়, অমনিতে মুষড়ে পড়েন, তা মেনে নেওয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রে শিশুকে উৎসাহ জোগাতে হয়, যেন ঘরের মধ্য থেকেই সে আত্মবিশ্বাসের সূত্রটি জোগাড় করে নেয়। কখনো কখনো আপন ভাইবোন, কিংবা ঘরের অন্যান্য শিশু তাকে সুস্থ প্রতিযোগিতার মেজাজ তৈরি করে দেয়। তার প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। এ ধরনের সম্পর্ক তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে। নিজের ইমেজ কোনোভাবে তৈরি করতে হবে, কোনো সমস্যা কীভাবে উতরাতে হয়, সে ধারণা পাইয়ে দেয়। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আগ্রহ জন্মাতে, রুচি-পছন্দ নির্মাণে, এমনকি ভবিষ্যতে সে কী হতে চায় তা নির্বাচনেও দারুণ ভূমিকা পালন করে।

লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized BY WooHostBD