যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগম (৩৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার বেলা ১১টার দিকে ওই নারীর মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত আফরোজা বেগম উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের নর্থবেঙ্গল এলাকার আ. জলিল মোল্যার স্ত্রী।
নিহতের বড় ভাই নূর ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছোট বোন আফরোজা খুব ভাল মানুষ। শনিবার রাতে অভয়নগর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই মাদক বিক্রির অভিযোগ এনে তাকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে তাকে সিলোন দারোগা নির্যাতন করে।’
তিনি বলেন, ‘থানায় আফরোজা অসুস্থ হয়ে পড়লে আজ সকাল ৯টায় প্রথমবার এবং সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয়বার পুলিশ আফরোজাকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। প্রথমবার চিকিৎসক আফরোজার উন্নত চিকিৎসার জন্য বললেও পুলিশ তাকে থানায় ফিরিয়ে আনে। এরপর ১১টায় বোন চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।’
নিহত আফরোজার ছোট ছেলে সাব্বির মোল্যা বলেন, ‘গতকাল রাতে বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। এরমধ্যে সিলন দারোগা আম্মুকে বলেন, কাছে যা আছে বের করে দিতে। আম্মুর কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন দারোগা) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। নারী পুলিশ এসে আম্মুর শরীর তল্লাশি করে কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে দিতে ফেলে দেন। আম্বুকে মারতে নিষেধ করলে তিনি আমাকেও চড় মারেন। এরপর নারী পুলিশের সহায়তায় ঘরে দরজা দিয়ে কী করেছে জানি না।’
নিহতের বড় ছেলে আরিফ হোসেন মুন্না বলেন, রাতে মাকে বাড়ি থেকে আটক করার পরই নির্যাতন করা হয়। এতে মা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সময়মত মাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সময়মত চিকিৎসা দেওয়া হলে তিনি মারা যেতেন না। হাসপাতালের ডাক্তারও বলেছেন, মা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
অভয়নগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সিলোন আলী নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল শনিবার রাত ১টার দিকে অভিযান চালিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে আফরোজা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছে ৩০টি ইয়াবা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘অভিযানে উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম স্যারের নেতৃত্বে আমি, এএসআই শামসুল হক এবং মহিলা কনস্টেবল রাবেয়া খানম ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর আফরোজাকে মহিলা হাজতে রাখা হয়। আজ সকালে তিনি অসুস্থ হলে ৯টার দিকে আমাদের মহিলা পুলিশ সদস্যরা তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ডাক্তার চিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থবোধ করায় ছেড়ে দেন। এরপর ১০টায় ফের উনি অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোরে রেফার্ড করেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাজারহাট পৌঁছালে তিনি মারা যান।’
তিনি জানান, আফরোজার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিব মো. আলী হাসান বলেন, সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে আফরোজাকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। কেন মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে অভয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আকিকুল ইসলাম বলেন, আফরোজা বেগমকে শনিবার রাতে ৩০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে তাকে মহিলা থানা হাজতে রাখা হয়। সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক বলেছেন, তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’