1. admin@orieldigital.pw : rahad :
  2. Jhrepons@gmail.com : halchal :
ডিজিটাল যুগেও ম্যানুয়াল ৫৫ জেলা কারাগার | Daily Halchal Somoy
শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
দামি ঘড়ি-আইপ্যাড দেখে লোভ হয়েছিল ‘প্রলোভন’ জয়ের গল্প লিখলেন জ্বালানি উপদেষ্টা যাত্রাবাড়ী রাজনৈতিক হালচাল-সাফকথা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ নির্বাচন বৈধ না হলে তা আয়োজনের কোনো অর্থ নেই: ড. ইউনূস নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কিনা, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থাকে স্পষ্ট করলেন ড. ইউনূস শেখ মুজিবের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক জানিয়ে শোবিজ তারকাদের পোস্ট শিল্প খাতে মন্দা কাটছে না গাজীপুরে এক বছরে ১০৬ কারখানা বন্ধ, ‘অপরাধে ঝুঁকছেন’ বেকার শ্রমিকেরা ভারতে ৩ মাসে ২০০ মানুষের ধ’র্ষ’ণের শিকার বাংলাদেশি কিশোরি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

ডিজিটাল যুগেও ম্যানুয়াল ৫৫ জেলা কারাগার

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৪৪ Time View

বাংলাদেশের অধিকাংশ কারাগারে এখনো লাগেনি আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। দেশের প্রায় সর্বক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ডিজিটালাইজেশন করা হলেও পিছিয়ে আছে বেশির ভাগ কারাগার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারে মোটামুটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও বাকি ৫৫টি জেলা কারাগারে বলতে গেলে নেই। জেলা কারাগারগুলোতে সীমানাপ্রাচীর ঘিরে বা কিছু পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও বাকি সবকিছুই চলে ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশেই প্রযুক্তিনির্ভর কারা ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, দেশের কারাগারে আধুনিক প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতির মধ্যে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, লাগেজ স্ক্যানার, বডি স্ক্যানার, সিসিটিভি ক্যামেরা, মোবাইল ফোন জ্যামার বা ব্লকারের ব্যবহার রয়েছে। এসব আধুনিক প্রযুক্তি শুধু কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে ব্যবহার করা হয়। জেলা কারাগারে এর অনেক কিছুই নেই। জেলা কারাগারে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বন্দি বা হাজতিদের তল্লাশি করা হয়। এতে অনেক সময় বন্দিরা কারারক্ষীদের নজর এড়িয়ে অবৈধ মাদক নিয়ে কারাগারে ঢুকে পড়েন। কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যামার থাকলেও জেলা কারাগারগুলোতে এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিদেশি কারাগারের ব্যবস্থাপনা-অভিজ্ঞতা
সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে কারাভোগ করা  হোসেন (সামাজিক অবস্থানের কারণে ছদ্মনাম) নামে বাংলাদেশি এক বন্দির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তার কথাগুলোও সংরক্ষিত আছে। হোসেন তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “জনসমক্ষে সিগারেট বা ধূমপান করায় সিঙ্গাপুরের আদালত আমাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে যখন কারাগারে নেওয়া হয়, তখন থেকে সবকিছুই হয়েছে ‘ডিজিটালাইজেশনের’ মাধ্যমে।” হোসেন বলেন, কারাগারে বন্দির প্রবেশকালেই দেওয়া হয় ডিজিটাল আইডি নাম্বার। যে আইডি নাম্বার দিয়ে সার্চ দিলেই বন্দির সব তথ্য ও অবস্থান তথা কোন সেলে কী অবস্থায় আছেন, সবকিছু জানতে পারে কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি বন্দিদের সবার জন্যই আলাদা সেল। প্রতিটি সেলে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব সেলে রয়েছে বন্দিদের ‘ট্যাব’ ব্যবহার, বই পড়া, টেলিভিশন দেখা ও খেলাধুলার সুযোগ। সেলের গেটগুলো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, সুইচ চেপেই খোলা বা বন্ধ করা যায়। তবে সেই এখতিয়ার শুধু কারারক্ষীদের হাতেই থাকে। কারা অভ্যন্তরে খুব নিয়মকানুনে কড়াকড়ি থাকলেও বন্দিদের শারীরিকভাবে কোনো আঘাত করা হয় না।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ার একটি কারাগারের ব্যবস্থাপনা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন গাজীপুরের বাসিন্দা রুবেল আকন (ছদ্মনাম)। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসায় কাজ করতে গিয়ে ২০১৮ সালে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ অবস্থানকারী হিসেবে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার পর রুবেলকে দেশটির ‘সুগাই বুলোহ’ কারাগারে পাঠানো হয়।

রুবেল আকন  বলেন, ‘ওই কারাগারে বন্দিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং কম্পিউটারাইজড ডেটাবেস ব্যবহৃত হয়। ওই কারাগার থেকে বন্দি পালানো একেবারে অসম্ভব। আমি তিন মাস সেখানে ছিলাম। কারাগারের প্রধান ফটক অটোমেশন করা। ভেতরে প্রবেশের সময় দেখেছি। আমার ব্যাগ একটি মেশিনের ভেতরে দিল এবং কী আছে সব ছবি দেখা যাচ্ছিল। এরপর আমার শরীর স্ক্যানার করে ভেতরে ঢোকানো হয়। তবে ওই কারাগারে বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের যারা বন্দি হিসেবে রয়েছেন তাদের কিছুটা কষ্ট হয়। কারণ মালয়েশিয়ান বন্দিরা অন্য দেশের বন্দিদের খাবার জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে।’

দেশের কারাগারগুলোয় প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা
কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের মোট ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারে মোটামুটি আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে। তবে ৫৫টি জেলা কারাগারে বন্দি ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তেমন ব্যবহার নেই। এর ফলে কয়েদি বা হাজতিদের সঙ্গে কোনো অবৈধ সামগ্রী বা দ্রব্য ঢুকছে কি না, তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। যদি আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রতিটি কারাগারে স্থাপন করা যায়, তবে বন্দিদের সঠিক নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা ও নজরদারি নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, উন্নত দেশগুলোতে কারাগার ব্যবস্থাপনায় সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যেতে পারেন না। বন্দিরা অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে বিচরণ করলেও পালানোর চিন্তা করেন না। কারণ সেখানে কারাগারের প্রধান ফটক সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। কারাগারের সীমানাপ্রাচীর যেমন মজবুত, তেমনি ওপরের অংশে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া পুরো কারাগার সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রেখে নিবিড়ভাবে নজরদারি করা হয়। উন্নত অনেক কারাগারে সেলে থাকা বন্দিদের পায়ে ডিজিটাল রিং পরানো হয়, এতে সার্বক্ষণিক বন্দির সব পদক্ষেপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে কোনোটিতেই বডি বা লাগেজ স্ক্যানার নেই। এর ফলে অনেক সময় বন্দিরা পায়ুপথে মিনি মোবাইল ফোন বা মাদকদ্রব্য নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারেন।

যা বলছেন কারা কর্মকর্তারা
সিনিয়র জেল সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেখা যায়- বন্দিরা পালানোর জন্য কারাগারের ‘পেরিমিটার ওয়ালের’ ইট খুলে ফেলেছিল। এ ছাড়া প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলেছিল। কারাগারের পেরিমিটার ওয়াল যদি পাথর ঢালাই করা ও শক্তিশালী অবস্থায় থাকত, তবে বন্দিরা সেটি ভাঙতে পারত না। একই সঙ্গে অটোমেশন গেট সিস্টেম থাকলে সেটি ভেঙে বন্দিদের পালানোর কোনো সুযোগ থাকত না। এই ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশে প্রায় কোনো কারাগারেই নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন-ঢাকা বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির বেশ কিছু সরঞ্জামের ব্যবহার রয়েছে। তবে জেলা কারাগারগুলোতে সেগুলোর অনেক সুবিধা নেই।’ তিনি বলেন, দেশের সবকটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের তল্লাশিতে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, লাগেজ স্ক্যানার, বডি স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোন জ্যামার রয়েছে। বড় কারাগারগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হয়। এ ছাড়া এ বছরে কারাবন্দিদের খবর জানতে স্বজনদের জন্য একটি হটলাইন নাম্বার চালু করেছে সরকার।

তিনি বলেন, জেলা কারাগারগুলোতে বডি ও লাগেজ স্ক্যানার নেই। এই সুবিধা দেশের প্রতিটি কারাগারেই থাকা উচিত। কারাগারের প্রধান ফটকে যদি এই দুটি মেশিন ব্যবহার করা যায়, তবে কোনোভাবেই কারাগারের ভেতরে অবৈধ জিনিস প্রবেশ করতে পারবে না। বন্দিরা বিশেষ কায়দায় বা পায়ুপথে করে মোবাইল ফোন বা মাদকসহ অবৈধ কিছু বহন করতে পারবেন না।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান খবরের কাগজকে বলেন, কারাগারে যত বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে, তত বেশি নিরাপত্তার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতিও কমবে। এ ছাড়া বন্দি ব্যবস্থাপনাও অনেক সহজ হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
Theme Customized BY WooHostBD