বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে যখন একটি প্রতিবেদন প্রচার হচ্ছিল, তখন চলে আসে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপিকার সঙ্গে আরেকজনের কথোপকথন। অনুষ্ঠানে হঠাৎ চলে আসা কথোপকথনে গালি দিতে শোনা যায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের উদ্দেশে।
এই ঘটনায় উপস্থাপিকাসহ তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটির পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন চলছে নানা আলোচনা।
হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেও ফেসবুক একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওই টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “আমরা এই দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আপনার এই গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম।”
“শুধু মত প্রকাশ নয়, দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক,” যোগ করেন তিনি।
তবে গালি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-বিধান আছে কি না, আইনে কোনো বাধা আছে কি না, এসব নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা।
ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,গালি দেওয়াটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার মাঝে পড়ে কি না, সে বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ
তবে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কাউকে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যদি বলা হয় যে তিনি ডাকাত কিংবা চোর, এবং সে যদি মনে করে যে মানহানি হয়েছে, তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।
“কেউ বললো, ছাগল। এটা মানহানিকর হবে, আইনে কোথাও ব্যাখ্যা নাই। কিন্ত আপনি ফিল করতে পারবেন যে মানহানি হয়েছে,” ব্যাখ্যা করেন মি. মোরসেদ।
এছাড়া, কেউ যদি আড়ালে থেকে কাউকে গালি দেয়, তখন কী হবে?
“তখন মামলা হবে না। মামলা হতে হলে প্রমাণ লাগবে। আর যদি মানহানিকর মন্তব্যের প্রমাণ থাকে, তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন” বলে জানান আইনজীবী মনজিল মরসেদ।
ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,ব্যক্তিগত আলাপে অনেকেই অন্যকে আড়ালে গালি দেন (প্রতীকী ছবি)
এক্ষেত্রে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, কেউ কোনো অপরাধ করলে তাহলে তার বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করা যাবে। কিন্তু কাউকে অপমান করা বা গালি দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
“রাজনীতিবিদদের সমালোচনা হতে পারে। তাদের অপরাধের বিষয়ে বলাটা আর তাদের বাবা-মা তুলে গালি দেওয়াটা কোনোভাবেই শোভনীয় না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ,” বলেন মিজ হাসান।
তার মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনোই কাউকে আঘাত করে হতে পারে না। জনগণের সমালোচনা করার অধিকার আছে। কিন্তু কোনোকিছুই একটি “বর্ডারকে ক্রস করে নয়।”
এক্ষেত্রে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেও তার পোস্টের মন্তব্যে সমালোচনার কথাই লেখেন।
তিনি লিখেছেন, “রাজনীতিবিদদের যাতে স্বাধীনভাবে সমালোচনা করা যায়, সেই অধিকারের জন্যই আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের এই লড়াই একটা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই, যেখানে যে কোনো মানুষ রাজনীতিবিদদের উচিত বা অনুচিত সমালোচনা করতে পারবে।”
“তবে প্রত্যাশা থাকবে সেটি হবে গঠনমূলক উপায়ে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর, সেই মত আমার বিরুদ্ধে হলেও,” যোগ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
উল্লেখ্য, আইনে কোনগুলো মানহানি বলে গণ্য হবে না, দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় তা বলা আছে।
জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে, সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনও ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মতপ্রকাশ করলে, যেকোনও জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে, জনকল্যাণের স্বার্থে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কারও সম্পর্কে কিছু বললে কিংবা সৎ বিশ্বাসে কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে কারও সম্পর্কে অভিযোগ করার মতো বিষয় হলে তা আইনের চোখে মানহানিকর বলে গণ্য হবে না।
আইনজীবীরা বলছেন, আইনে বারবার ভালো উদ্দেশ্যে অভিমত প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে।