বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী ধারার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত এই আলেম একই সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির। ফিকহ ও হাদিসে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। ধর্মীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত রেজাউল করীম দেশের রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ পথরেখা নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা কতটা প্রস্তুত?
উত্তর : ২০১৮ সালের মতো এবারও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। তবে আমরা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করে একটি ইসলামিক ভোটব্যাংক গঠনের চেষ্টা করছি। জোট হলে আলোচনার ভিত্তিতে আসন ভাগ হবে।
প্রশ্ন : আপনি আগেই বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার দরকার।
প্রশ্ন : আপনারা নির্দিষ্ট সময় হিসেবে ডিসেম্বর বলছেন?
উত্তর : আমরা কখনো নির্দিষ্ট করে ডিসেম্বর বলিনি। বলেছি, সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তত দেড় বছর সময় দিতে হবে। সে সময়ের মধ্যেই সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব। সময় লাগবে পাঁচ দিন না ১০ দিন, সেটা সংস্কারকারীরা বুঝবেন। তবে ধারাবাহিক অগ্রগতি হলে সময় দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
উত্তর : আমরা দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছি, স্থানীয় নির্বাচনটা আগে হলে ভালো হয়। কারণ সেখানে কোনো কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং পেশিশক্তি ব্যবহারের পরিবেশ থাকবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে সেখানে যোগ্য লোকগুলো নির্বাচিত হওয়ার মতো পরিবেশ থাকবে। এ জন্য আমরা এই নির্বাচন আগে চেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনারা ইসলামী দলগুলোর একটি জোট গঠন করছেন। বিএনপি বা জামায়াত কি এর অংশ হতে পারে?
উত্তর : আমরা বহু দিন ধরেই সমমনা ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। আলোচনা চলমান। প্রয়োজন হলে আরো দল এই জোটে যুক্ত হতে পারে।
প্রশ্ন : ইসলামী দলগুলো ভোটে কখনোই বড় সাফল্য পায়নি। মানুষ কি ইসলামী শাসন চায় না?
উত্তর : আওয়ামী লীগ এখন মানুষের মন থেকে অনেক দূরে। তারা সহিংসতা, হত্যা আর অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষের আস্থা হারিয়েছে। মানুষ ইসলামী আদর্শের শাসন এখনো বাস্তবে দেখেনি। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মানুষ ইসলামী নীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। সঠিকভাবে ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে ভোটের মাঠে গেলে মানুষ ভোট দেবে।
প্রশ্ন : তারেক রহমান বলছেন, তাঁরা অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে লড়ছেন। আপনারা কি এমন কিছু দেখছেন?
উত্তর : তাঁর কাছে হয়তো এমন তথ্য আছে বলেই বলেছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস দেশপ্রেমিক হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। তবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বিতর্ক তৈরি করতে পারে। আমরা বলেছি, এই কমিশন বাতিল করা হোক।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনার দেওয়া কওমি মাদরাসার সনদ শিক্ষার্থীরা কতটা কাজে লাগাতে পারছে?
উত্তর : এখন পর্যন্ত এই সনদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা তেমন কোনো উপকার পেয়েছে বলে আমাদের নজরে আসেনি।
প্রশ্ন : দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন প্রস্তাব নিয়ে কী ভাবছেন?
উত্তর : আমরা বলেছি, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে ফ্যাসিস্ট মনোভাব তৈরি হয়। তাই এটি পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা উচিত। প্রয়োজন হলে সীমা বেঁধে দেওয়া যেতেই পারে।
প্রশ্ন : আপনাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিভাবে চলে? কোথা থেকে অর্থ আসে?
উত্তর : আমাদের সব কার্যক্রম চলে সাধারণ মানুষ ও সদস্যদের সহযোগিতায়। ইসলামপ্রেমিক, দেশপ্রেমিক এবং কিছু ব্যবসায়ী আর্থিক সহায়তা করেন। আমাদের কোনো বিদেশি বা গোপন অর্থায়ন নেই।