পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনরায় স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন, শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের সহধর্মিণী নেহরীন ফেরদৌসী মিলি। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সে ঘটনার দুদিন পর নিশ্চিত মৃত্যুপুরী থেকে নিজে ফিরে এলেও ফিরে পাননি তার ২৫ বছরের জীবনসঙ্গীকে। ঐ ঘটনার মাত্র দুই মাস আগেই উদযাপন করেছিলেন তাদের বিয়ের রজতজয়ন্তী।নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে আমরা অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতে ১৬ বছর পার করে দিলাম। আমরা এ হত্যাযজ্ঞের বিচার চাই। দেশের মানুষ এ বিদ্রোহের আসল ঘটনা জানতে চায়। যে বিচার হয়েছে, সেটা আসলে কোনো বিচার নয়। এতগুলো বছর এ বিষয়ে কথা বলার কোনো স্বাধীনতা আমাদের ছিল না। আমাদের দাবি—এ দিবসটিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি চাই। বিডিআরের তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার (ঢাকা) কর্নেল মুজিব ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন। চাকরিজীবনে তিনি ১, ৮ ও ৯ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, ৫ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, এসএমআই, ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও বিডিআরে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরে কর্নেল জেনারেল স্টাফ ও ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার (কনস্যুলার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জর্জিয়ায় জাতিসংঘ পর্যবেক্ষণ মিশনেও দায়িত্ব পালন করেন। কর্নেল মুজিব দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে সরকারের ‘ডালভাত’ কর্মসূচিরও দায়িত্বে ছিলেন।
বিডিআর বিদ্রোহের সেদিনের কথা স্মরণ করে মিলি মুজিব বলেন, সেদিন কর্নেল মুজিব কিছুই আঁচ করতে পারেননি। বাড়ি থেকে একসঙ্গে চা খেয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন দরবার হলের উদ্দেশে। দরবার হলে সেদিন তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। মুজিবসহ মেধাবী এ অফিসারদের সাহস আর ত্যাগের জন্য আমি গর্ববোধ করছি, কিন্তু দুঃখ একটাই, তাদের সাহসিকতাকে জাতির কাছে প্রমাণ করতে গিয়ে এত বড় বলিদান দিতে হলো। এ দেশ তাদের শূন্যতা অনুভব করবে দীর্ঘদিন আর স্বজন হারানোর বেদনা আমাদের সঙ্গী হয়ে থাকবে চিরকাল।
তিনি আরো বলেন, দুটি টিনএজ ছেলে ও একটি মেয়েশিশুকে আমার একাই মানুষ করতে হয়েছে। নিজের শূন্যতা যেমন ছিল, তেমন ছিল তাদের মানুষ করার তাড়না। সন্তানদের মানসিক দিকটা সব সময় আমাকে নাড়া দিত। তিনি বলেন, আমার বাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি শূন্য থেকে শুরু করেছি। তখন আমার বড় ছেলের ১৯ বছর, ছোটটার ১৭ আর মেয়েটা সবে ১০ বছরের। সেনাবাহিনীর সব বাবাদের ‘শ্রেষ্ঠ বাবা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওনারা বাচ্চাদের বেশি সময় দিতে পারেন না। কিন্তু যে সময় বাচ্চাদের সঙ্গে কাটান তা খুবই গুরুত্ব দিয়ে। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি জানি না। তবে চেষ্টা করেছি। আমার ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা নেই, সেভাবেই নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাদের প্রত্যেক শহিদ পরিবারকে ১০ বছর পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকা করে দেয়। সেটা আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনায় কাজে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে বলে প্রায়ই লোকমুখে শুনতে হয়। কিন্তু আমি তা জানি না। তবে বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, মানুষকে বিডিআর বিদ্রোহের সত্যিকারের ঘটনা জানানো হবে।